Friday, March 29, 2019


Thursday, March 21, 2019

জেনে নিন শিশুর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে

একজন শিশুর ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধই যথেষ্ট। একটু পানিও প্রয়োজন নেই। তাই ছয় মাস পর্যন্ত শিশুর খাদ্যতালিকা হলো শুধু বুকের দুধ। যদি কোনো কারণে সেই শিশু বুকের দুধ না পায় তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তার জন্য আলাদা দুধের ব্যবস্থা করতে হবে। 
৬-৮ মাস বয়স :
(১) সকাল ৭টা-৮টা বুকের দুধ অথবা ৬-৮ আউন্স দুধ
(২) সকাল ১০টা, ৪-৬ টেবিল চামচ সুজি/খিচুড়ি, ৪-৬ টেবিল চামচ চটকানো ফল।
(৩) দুপুরে বুকের দুধ অথবা ৬ আউন্স দুধ, ১-৩ টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি।
(৪) বিকেলে ১-৩ টেবিল চামচ চটকানো ফল। বুকের দুধ, ৩-৬ আউন্স দুধ
(৫) রাতে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। খিচুড়ি/সুজি ৪ টেবিল চামচ।
৯-১২ মাস বয়স :
(১) সকাল ৭-৮টায় বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ।
(২) সকাল ১০টায় চার-আট টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি, ৪ টেবিল চামচ পরিমাণ চটকানো ফল।
(৩) দুপুরে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। ৪ টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি। ৪ টেবিল চামচ সবজি/মাংস
(৪) বিকেলে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। বিস্কুট/দই/মিষ্টি জাতীয় যেকোনো একটা খাবার।
(৫) সন্ধ্যায় ৪ টেবিল চামচ সবজি/মাংস। ৪ টেবিল চামচ পরিমাণ চটকানো ফল। নুডলস/নরম পিঠা/কেক ইত্যাদি।
(৬) রাতে বুকের দুধ/৬-৮ আউন্স দুধ। ৪-৬ টেবিল চামচ খিচুড়ি/সুজি।
জেনে নিন শিশুর খাদ্য তালিকা সম্পর্কে 
শিশুর জন্য সুষম খাদ্য :
স্বাস্থ্য, সুঠাম ও অটুট রাখতে হলে সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা খুবই প্রয়োজন। দেখা গেছে: মাছ, মাংস বা ডাল, দুধ, ভাত বা রুটি, ফল-সবজি, পানি এই পাঁচ জাতের খাদ্য আমাদের প্রতিদিনের খাবারে থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা হয়। এই খাবারগুলোর প্রতিটির পরিমাণ এমন হতে হবে, যাতে ক্যারোলি, ভিটামিন, খণিজ-লবণ, পানি- এই চারটি জিনিসেরই দৈহিক চাহিদা ঠিকমত পূরণ হয়; আর এ-রকম খাদ্যই হচ্ছে সুষম খাদ্য। 
সাধারণভাবে বলা যায়, উপরে যে ছয় ধরনের খাবারের উৎস লিখা হয়েছে, এর প্রতিটি উৎস থেকে একটি বা দুটি পছন্দসহ খাবার যা স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় এবং দামেও কম-বেছে নিয়ে মিলিয়ে প্রতিদিন খেলে দেহের খাদ্য চাহিদা পূরণ হয়। প্রতিদিনই মাছ, মাংস বা ডিম জোগাড় করা না গেলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই, এ গুলোর পরিবর্তে ডাল, সিমের বিচি বা ছোলা খেলেও চলবে। অনেক শিক্ষিত পরিবারে এ রকম দেখা যায়: ছেলে পছন্দ করে তাই তাকে ভাত, চিনি ও ঘি দিয়ে খাবার দেয়া হয়। এ ভাবে খেলে তার কাজ করার শক্তির চাহিদা কিছুটা মিটবে, কিন্তু এই খাবারে আমিষ, লবণ, ভিটামিনের অভাবহেতু তার শরীরের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি-সাধন হবে না, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও জন্মাবে না।
আমাদের খাওয়ার অভ্যাস :
খাবার দামী হলেই যে তা সব সময় ভাল খাবার হবে, এর কোন মানে নেই। কম দামের খাবার থেকেও দেহের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাপাদান পাওয়া যেতে পারে। মাছ, মাংস ও ডিমের দাম বেশী; এ সমস্ত আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাব আমরা কম দামের খাদ্য, যেমন ডাল, সিম, ছোলা ইত্যাদি দিয়ে পূরণ করতে পারি। হয়তো অনেকেই জানেন না যে, ডালে প্রচুর আমিষ থাকে, ডাল থেকে ভিটামিন এবং খণিজ লবণও পাওয়া যায়।

ভাত,ডাল,তেল,সবজি (কলা,পেঁপে,লাউ) এবং সম্ভব হলে মাংস, কলিজা বা ডিম মিলিয়ে যে খিঁচুড়ি তৈরী করা হয়, তা খুবই মুখরোচক এবং পুষ্টিকর। এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি খাদ্যাপাদানই বর্তমান থাকে। চালের চেয়ে গম কম পুষ্টিকর নয়। গমের দামও কম। দুই এক বেলা আটার রুটি বা আলুর চপ খেয়েও আমরা চালের চাহিদা কমাতে পারি। সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ আছে। গ্রামে প্রায় প্রত্যেকের বাড়ীতেই রান্নাঘরের পাশে ছোট্ট এক চিলতে জায়গা থাকে। এতে সহজেই মৌসুমী ফল-মূল ও শাক-সবজি ফলানো যায়। তাহলে, শাক-সবজি বাজার থেকে কম কিনতে হয়।
অনেকেই মনে করেন: ফল দামী হলেই বুঝি এর খাদ্যমান বেশী হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আপেল ও কমলালেবুর দাম পেয়ারা বা আমলকির চাইতে অনেক বেশী; কিন্তু পেয়ারা বা আমলকিতে যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে, তা কমলালেবু ও আপেলের চাইতে অনেকগুণ বেশী। উপরোন্ত, পেয়ারাতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। আঙ্গুরের খাদ্যমান অত্যন্ত নিম্নমানের।
শিশুর খাদ্য কেমন হওয়া উচিত :
শিশুর খাদ্য অপর্যাপ্ত কিংবা ত্রূটি হলেই শিশু হবে অপুষ্টির শিকার। তাই সুস্থ স্বাভাবিকভাবে শিশুকে বেড়ে তোলার জন্য প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করা। শিশুর খাদ্য নির্বাচনের সময় তার বয়সসীমা, তার কার্যকলাপ, সুস্থতা ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক লক্ষণীয়। শিশু বয়সকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন_ ১ থেকে ৩ বছর, ৩-৬ বছর [প্রি-স্কুলগামী], ৬-১২ বছর [স্কুলগামী]।
শিশুর বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে নজর রাখতে হয় তার খাবারের কিলোক্যালোরি, প্রোটিন, খনিজ লবণ [ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, জিংক ও আয়োডিন], ভিটামিন [এ, ডি, সি, বি-কমপ্লেক্স], পানি ও দুধের প্রতি। তাহলে জানা দরকার বয়সভেদে খাবারের কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। যেমন_ ১-৩ বছরের শিশুর দৈনিক কিলোক্যালোরির প্রয়োজন ১২১০-১২৫০। কিন্তু ৩-৬ বছরের শিশুর প্রয়োজন ১৭০০ কিলোক্যালোরি দিনে। সে ক্ষেত্রে ৬-১২ বছরের শিশুর প্রয়োজন আছে ১৯৫০-২১০০ কিলোক্যালোরি। 
এ ক্ষেত্রে ছেলেমেয়েতে কিছুটা পার্থক্য দেখা দেয়। প্রোটিনের বেলায়, শিশু বয়সেই প্রতি কেজি ওজনের জন্য বেশি প্রোটিন প্রয়োজন। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি কেজি ওজনে কমলেও মোট প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যেমন_ ১-৩ বছরে ১.৫-২ গ্রাম/কেজি; ৩-৬ বছরে ২ গ্রাম/কেজি; ৬-১২ বছরে মোট প্রোটিন প্রয়োজন ৪০-৬০ গ্রাম দিনে।

এ ছাড়াও অন্যান্য উৎপাদানের চাহিদা মেটানোর জন্য অল্প করে দৈনিক খাবারের পরিমাণ [মাছ, মাংস, ভাত, রুটি, সবজি, ফল ইত্যাদি] বাড়ালেই যথেষ্ট। তবে দুধের পরিমাণ খাবারে নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুধের পরিমাণ কমে অন্য খাবারের প্রতি আসক্তি বাড়ে, তবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় দুধ থাকা প্রয়োজন।
কোন ধরনের খাবার শিশুর জন্য উপযোগী :
ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল, পাতাসবজি, সবজি, মৌসুমি ফল, শুকনা ফল, পানি ও পানীয় সব ধরনের খাবারের সঙ্গেই শিশুকে অভ্যস্ত করতে হবে এবং দৈনিক খাদ্য তালিকায় তা নিশ্চিত করতে হবে। তবে শিশুভেদে খাবার তৈরিতে কিছুটা পার্থক্য রাখা যায়। যেমন_ কোনো শিশু সরাসরি ডিম খেতে না চাইলে তাকে ডিমের হালুয়া, পুডিং, কাস্টার্ড ইত্যাদি তৈরি করে দেওয়া যায়। মাছ-মাংসের পরিবর্তে খিঁচুড়ি দেওয়া যায় কিংবা ফিশফিঙ্গার, কাবাব তৈরি করা যায়। আবার সবজি বড়া তৈরি করে সবজির চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করা সম্ভব।
এ ছাড়াও মনে রাখা দরকার, নতুন নতুন খাবারে শিশুকে অভ্যস্ত করা প্রয়োজন। বিশেষ করে মৌসুমি ফল, সবজি অবশ্যই শিশুর খাদ্যে সংযোজন করা প্রয়োজন। তবে জাঙ্ক ফুড শিশুর সুস্বাস্থ্যের অন্তরায়। ফলে এসব খাবার শিশুর খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়া বাঞ্ছনীয় এবং যে খাবারই দিই না কেন সেটা যেন টাটকা হয়।

  • কৃতজ্ঞতা সংকলন: ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
প্রকাশকাল: জানুয়ারি ৬, ২০১৮
তথ্য এবং ছবি : গুগল